চাকরির খোঁজ : ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ ও শুরুটা কখন থেকে?
শাহরীন জে হক : আসলে তখন আমি ইন্টেরিয়র ডিজাইন বা এমন কোনো শব্দও শুনিনি। তখন আমার বয়স ৫ কি ৬ বছর হবে; সে বয়সে ঘড় গোছানো আমি খুব পছন্দ করতাম। তার মধ্য দিয়েই আমি যে পুরোদস্তুর ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের কাজটাই কিছুটা হলেও করছি, তা আমি না বুঝলেও আমার আব্বু বুঝতেন। তাই প্রতিদিন আব্বু অফিস থেকে ফিরে যখন বাড়ির খাট-আলমারি ও অন্যান্য আসবাবপত্র যে অন্য স্থানে দেখতেন, সেটা তিনি খুব পছন্দ করতেন আর আমাকে উৎসাহ দিতেন। এভাবেই মনের অজান্তে আমি হয়ে উঠছি পুরোদস্তুর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার।
চাকরির খোঁজ : ‘ঘর-গোছানো’ আর বর্তমানের ‘ইন্টেরিয়র ডিজাইন’- দু’টোর মধ্যে এখন কতটা পার্থক্য খুঁজে পান?
শাহরীন জে হক : সত্যি বলতে কি, মিল বলতে কেবল সাজানোটাই। তবে ঘড় সাজানো আর ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের মধ্যে মিলটা কেবল এতটুকুই। যে বা যিনি ঘর সাজানো পছন্দ করেন, তার পক্ষে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হওয়া সহজ হয়। কেন না- তিনি নতুনত্ব ও সাজানোটা পছন্দ এবং উপভোগ করেন। সুতরাং তার জন্য কাজটা করা সহজ। আরও স্পষ্ট করে বললে- ঘর সাজানো যদি প্রাথমিক পর্ব ধরি, তাহলে- ইন্টেরিয়র ডিজাইনটা হল, এর থেকে অনেক পরিপক্ব ও বহু পরের ধাপ। তবে আবারো বলছি, আপনার মধ্যে ডিজাইনটা বা সুন্দর গোছালো ভাব আছে কি না, সেটা কিন্তু প্রমাণ পাবে ঘর সাজানোর মধ্য দিয়েই। অর্থাৎ যার মধ্যে ঘর সাজানোর সৌন্দর্যটা আছে তার ইন্টেরিয়র বা এরকম আর্টিস্টিক কাজে সফলতা অর্জন সহজ। তবে দু’টোর মধ্যে বড় পার্থক্য হল- আপনি কিছু না জেনে-বুঝেও ঘর সাজাতে হয় তো পারবেন, কিন্তু ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হতে গেলে একাডেমিক নলেজ অবশ্যই দরকার।
চাকরির খোঁজ : ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হওয়ার পেছনে শিক্ষাটা কত জরুরি, আপনি কোথা থেকে শিখেছেন?
শাহরীন জে হক : প্রোপার নলেজটা খুবই জরুরি। কেন না আপনি জেনে থাকবেন, ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের বেশিরভাগই সময় কিন্তু বিল্ডিংয়ের ডিজাইন এরপর আর্কিটেক্চার সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে এদিক-সেদিক করতে হয়।
বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় দরজা-জানালা বা দেয়ালের সেটিং পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে বিল্ডিংটি যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। সুতরাং আপনার এ সংশ্লিষ্ট একাডেমিক জ্ঞান না থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
চাকরির খোঁজ : তাহলে তো দেখা যাচ্ছে কাজটি অনেক সেনসেটিভও বটে?
শাহরীন জে হক : অবশ্যই। আমি এ পর্যায়ে একটা কথা বলতে চাই। অনেকেই কিন্তু ভাবেন বাসা বা অফিস যেমন আছে, তন্মধ্যে সোফা-কার্পেট বা আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সুন্দর করে গুছিয়ে রাখার নামই হয়তো ইন্টেরিয়র ডিজাইন। বিষয়টি কিন্তু মোটেও তেমন নয়। কেন না ইন্টেরিয়র ডিজাইনটা হল হলিস্টিক ব্যাপার। এক কথায়- দরজাটা কেমন, কোথায় বা কোন টাইপের আল্পনা বা নকশা করলে সুন্দর লাগবে, জানালাটা কোন পাশে বা কিভাবে থাকলে আলো বা রুমের কালারটি ফুটে উঠবে। এমন সব নকশার ডিসিশন দিতে না পারলে কিন্তু ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে আপনি অতটা জনপ্রিয় বা ভালো কাজ পাবেন না।
চাকরির খোঁজ : এ কাজে যারা যুক্ত হচ্ছে বা জনপ্রিয় তাদের বেশিরভাগই দেখা যায় নারীরা; এটা কি, মেয়েরা ঘর সাজাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলেই?
শাহরীন জে হক : হ্যাঁ, এটা ঠিক। কেন না মেয়েরা জেনেটিক্যাললি একটু সাজানো-গোছানোপ্রিয় হয়ে থাকেন। তবে ছেলেরা এ পেশায় জনপ্রিয় নন বা সংখ্যায় কম, তা বলা যাবে না। বরং আমি তো মেয়েদেরেই কম উপস্থিতি দেখতে পাই।
চাকরির খোঁজ : যারা ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হতে চান, তাদের জন্য কি বলবেন?
শাহরীন জে হক : তাদের জন্য পরামর্শ হল- নিত্যনতুন, ব্রান্ডি ও আভিজাত্য আবার একই সঙ্গে ন্যাচারাল বিষয়বস্তুকে গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করুন।
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বর্তমানে কোন চলন-বলন সবাই পছন্দ করছেন, সেদিকেও নজর দেয়ার প্রাকটিস করুন। ইন্টেরিয়র নিয়ে পড়ালেখা তো অবশ্যই করবেন। এখন দেশে-বিদেশে অনেক ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট কোর্স, এমনকি অনার্স-মাস্টার্সও করার সুযোগ রয়েছে।
তাই, কেউ এ পেশায় আসতে চাইলে প্রথমে উচিত শিক্ষায় নিজেকে সমৃদ্ধ করা। এরপর নিজের একটা আইকনিক স্টাইল কাজ-কর্মে ফুটিয়ে তোলা। তবেই দেখবেন আপনার কাজ আর পরিচিতির অভাব হবে না।
চাকরির খোঁজ : ডিজিইনিংয়ের কাজটা কেমন উপভোগ করছেন?
শাহরীন জে হক : সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমি শুরু থেকেই এ পেশায় বেশ স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছি। এখন তো আরও। কেন না এখন আমি কনসালটেন্সি করি। নিজেকে অনেক সময় দিতে পারি। যেহেতু ছোট সময় থেকেই পেশাটা পছন্দ, তাই কাজের চাপের মধ্যেও সময়টাকে বেশ উপভোগ করি।
চাকরির খোঁজ : ইন্টেরিয়রের কোন দিকটাতে আপনি বর্তমানে বেশি নজর দিচ্ছেন?
শাহরীন জে হক : বর্তমানে আমি বাসা বা অফিসে শিশুদের রুম, এক কথায় কিড্স রুম/জোন কিভাবে আরও আধুনিক ও শিশুদের প্রিয় করে তোলা যায় সেটি নিয়ে কাজ করছি। আমি মনে করি শিশুরা হল ভবিষ্যৎ, তাই জীবনের শুরু থেকেই চারপাশ সাজানো-গোছানো পেলে, ওর বেড়ে উঠাটা অনেক সুন্দর হবে।
চাকরির খোঁজ : আপনি কোথা থেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে একাডেমিক জ্ঞান অর্জন করেছেন?
শাহরীন জে হক : আমি দেশ-বিদেশের কয়েকটা প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ে কোর্স করেছি। আমি মূল শিক্ষাটা নেই জাপান থেকে। সেখানে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের উপর ৩ বছরের একটি এক্সক্লুসিভ ডিল্পোমা কোর্সে অংশ নিয়েছি।
চাকরির খোঁজ : ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?
শাহরীন জে হক : সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল- এ পেশায় মানুষের পছন্দ নিয়ে কাজ করতে হয়।
অনকে সময় দেখা যায়, যে বিষয়টি গ্রামাটিক্যাললি ঠিক হচ্ছে না বা ন্যাচারালভাবে খাপ খাচ্ছে না, তেমন বিষয়েও পরামর্শ দিলে ক্লায়েন্টরা মানতে চান না; তখন নিজের একাডেমিক জ্ঞানের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয়।
কখনও তাদের পরিবারের বা স্বজনদের পছন্দ মতো কাজ করলেও কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে শুনতে হয়- আরে আপনি তো বিষয়টিতে অভিজ্ঞ; আপনি বুঝবেন না। তখন অবশ্য কিছু বলার থাকে না।
বেধে দেয়া সময়, অর্থ ও নিয়মের মধ্যে কাজ করাটাও একটা চ্যালেঞ্জ। তবে নিজের জ্ঞান, কমিউনিকেশন্স ক্যাপাসিটি এবং ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট ভালো জানা থাকলে এগুলো কোনো ব্যাপার না।
চাকরির খোঁজ : অন্য পেশায় না গিয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কেন?
শাহরীন জে হক : শৈশব থেকেই বিষয়টিকে আমি পছন্দ করি। এটা আমার ন্যাচারাল একটি বিষয়। যেটি আমি নিজের থেকেই পেয়েছি। যদিও গান করা, কবিতা আবৃত্তি এবং লেখালিখিতে যুক্ত থাকাও আমার পছন্দ। তবে এটা ঠিক, আমার সব অর্জনে বাবা বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। আমার ঘর সাজনোর বিষয় থেকে, বই পড়া, লেখালিখি এক কথায়- সব কিছুতেই বাবা খুব সহযোগিতা করেছেন।
চাকরির খোঁজ : প্রত্যেকেরই দেখা যায় নিজের অর্জনের পেছনে একজন থাকেন, আপনার যেমন বাবা; তাকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন-
শাহরীন জে হক : আসলে আজ আমি যতদূর আসতে পেরেছি তার অনেকাংশেই বাবার অবদান রয়েছে। সে জন্যই তো আমার প্রথম অ্যালবাম ‘শাহরীন এক্সপেরিমেন্টাল ক্রিয়েশন্স’-এ ‘বাবা’ নামে একটি গান করেছি।
কিছুদিন হল বাবাকে নিয়ে আমার লেখা ও সুর করা জনপ্রিয় এ গানটির মিউজিক ভিডিও’র কাজও শেষ করেছি; গানটির ইউটিউব লিংক হল-https://www.youtube.com/watch?v=4WWvVpttX1M&feature=youtu.be। আশা আছে, নিজের পরিচালনায় ‘বাবা’ নামে একটি ছবি তৈরি করা।
চাকরির খোঁজ : ক্যারিয়ারে সফলতা বলতে কি বুঝেন?
শাহরীন জে হক : পছন্দের কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারা।